কোরিয়ার ভিজিট ভিসা

Spread the love

প্রতিনিয়ত গ্রুপগুলোতে নিত্যনতুন সদস্য যোগ হচ্ছে। EPS এর দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে অনেকেই এই ভিজিট ভিসার দিকে ঝুকে পড়ছে। তাই অনেকের কমন একটি প্রশ্ন হচ্ছে।
“আমি কি ভিজিট ভিসা নিয়ে কোরিয়া এসে কাজ করতে পারবো?
এমন প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত তিন ধরনের কমেন্ট পরিলক্ষিত হয়।
১) কট্টরবাদী: তারা প্রথমেই অশ্রাব্য ভাষা দিয়ে শুরু করে এবং কল্পনাপ্রসূত আজেবাজে মন্তব্য করেন।
তাদের মতে, ভিজিট ভিসায় কেউ যদি কোরিয়া এসে থেকে যায় তাহলে দেশের মান-সম্মান এই মুহূর্তে ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে।
২) উৎসাহ বাদী: তারা অনেক যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে থাকে এটা আসলে কোন ব্যাপারই নয়। এটা খুবই সাধারণ একটা বিষয়।
তাদের মতে, আমি যেহেতু নিজে এভাবে এসেছি এবং ভালো আছি সুতরাং আপনিও চলে আসেন।
৩) সুবিধাবাদী: উপরোক্ত দুই প্রকার ছাড়া আর যত ধরনের আছে সবাই এই গ্রুপের মধ্যে। তারমধ্যে আমি একজন।
আমাদের মতে, এইভাবে কোরিয়া এসে থেকে যাওয়া কখনই উচিত না। তবে কেউ যদি এসে পরে তাহলে তার সাথে অমানবিক আচরণ করাটাও উচিত না।
মূলকথা হল,
আপনি যদি বাংলাদেশে অবস্থিত কোরিয়ান এম্বাসিকে বোঝাতে অথবা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, আপনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, দেশের বাহিরে ভ্রমণ করা আপনার শখ, কোরিয়াকে আপনার ভালো লেগেছে। কিংবা অন্যকোন ‘বিশেষ কারণ’ কাগজপত্রে প্রমাণ করতে পারলেই আপনাকে তারা ভিজিট ভিসা দিতে বাধ্য থাকে।
কারণ, প্রত্যেকটি উন্নতদেশগুলো তাদের দেশকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ করতে সবসময় সচেষ্ট থাকে। কোরিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়।
বাংলাদেশ থেকে যেহেতু অনেকেই ভ্রমণ করার স্বার্থেই এদেশে আসে অথবা ব্যবসা, চিকিৎসা, খেলাধুলা, বিনোদন, সরকারি-বেসরকারি ট্রেনিংয়ের জন্য‌ও এদেশে এসে থাকে । কিন্তু কিছুজন সেই সুযোগে কোরিয়াতে বিভিন্ন উপায়ে থেকে যায়।
সুতরাং, এই ভিজিট ভিসা বন্ধ করা যেমন আমাদের কাম্য নয় ঠিক তেমনি ভিজিট ভিসায় এসে থেকে যাওয়া ব্যক্তিদেরকেও স্পেশালভাবে আলাদা করার উপায়ও নাই।
দ্বিতীয় কথা:
কোরিয়াতে আসার পর কেউ যদি কোরিয়ান সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, আমি দেশে গেলে আমার বিপদ হবে, আমাকে মেরে ফেলা হবে, রাজনৈতিক ভাবে আমি আক্রান্ত অথবা বিশেষ কারণ দর্শাতে পারে তাহলে তাকে কোরিয়াতে থাকার জন্য G1 ভিসা দেওয়া হয়। এই ভিসাতে কোরিয়াতে বৈধভাবে থাকার অনুমতি মিললেও কাজ করে ইনকাম করার বৈধতা মিলেনা। তবে নির্দিষ্ট একটা সময় পর কাজের বৈধতাও পাওয়া যায়।
কিন্তু এই ভিসার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এটি ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো নয়, একবার আপনি এই ভিসা করলে আপনি আর কখনোই কোরিয়াতে অন্য ভিসায় বদল করতে পারবেন না। ফলে কোরিয়ার দরজা আপনার জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।
তৃতীয় কথা:
কোরিয়াতে মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তা কোরিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয় (노동부 ) এর দ্বারা কঠোরভাবে পালন করা হয়।
বলাই বাহুল্য, কোরিয়াতে বর্তমানে কাজের ক্ষেত্রে প্রচন্ড অস্থিতিশীল একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
কারণ, কোরিয়ার আইন অনুযায়ী, একজন মালিক ইচ্ছা করলেই যে কাউকে তার কোম্পানিতে নিয়োগ দিতে পারেন না ঠিক তেমনি একজন কর্মী ইচ্ছা করলেই যে কোন কোম্পানিতে কাজ করতে পারেন না।
এর পেছনে সব চেয়ে বড় কারন, একজন বৈধ কর্মীদের কাছ থেকে সরকার অনেক ধরনের ট্যাক্স আদায় করে থাকে কিন্তু অবৈধভাবে বসবাসকারী অথবা G1 কাছ থেকে সরকার এই ট্যাক্সগুলো নিতে পারেনা।
যদি কোন মালিক অবৈধভাবে কাউকে নিয়োগ করে থাকেন এবং ধরা পড়েন তাহলে মালিককে ৫০ লক্ষ উয়ন থেকে ১ কোটি উয়ন পর্যন্ত জরিমানা করা হয়ে থাকে এবং শাস্তিস্বরূপ ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত নতুন কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এজন্যেই কোন মালিক সাধারণত অবৈধ এবং G1 (কাজের পারমিশন নাই) এদেরকে নিয়োগ দিতে চান না।
বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়: যারা কোরিয়ান ভাষা শিখে বছরের পর বছর অপেক্ষা করে বৈধভাবে কোরিয়া এসেছে তাদের অনেকেই বর্তমানে কাজ পাচ্ছেন না।
কারণ, কোরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা হিসেবে মালিকগণ তার কর্মীদের প্রাপ্য মজুরি দিতে সক্ষম হচ্ছেন না। কোম্পানিতে কাজের চাপ থাকলেও নতুন কর্মীদের নিয়োগ দিতে পারছেন না। এমতবস্থায় অবৈধভাবে বসবাসকারী অথবা G1 ভিসা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কাজ পাওয়া খুবই দুস্কর।
আবার অপরদিকে কোরিয়াতে কাজ করার প্রথম শর্ত হল, কোরিয়ান ভাষার উপর দক্ষতা থাকা এবং কোরিয়ার সাংস্কৃতিক বিষয় অবগত থাকা।
কারণ, কোরিয়ানরা কোরিয়ান ভাষা ছাড়া অন্যভাষা ব্যবহার করতে পারে না। এজন্য ভাষা না শিখে আসা ব্যক্তিদের জন্য কাজ পাওয়া এবং কাজে টিকে থাকা শুধু কষ্টসাধ্য নয় বরং অসম্ভবও বটে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, আপনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে ভিজিট ভিসায় কোরিয়া আসতে পারবেন এবং বৈধভাবে থাকতে পারবেন এবং নির্দিষ্ট একটা সময়ের পর হয়তোবা বৈধভাবে কাজও করতে পারবেন। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত আপনি শারীরিক ও মানুষিক ভাবে টিকে থাকতে পারবেন কিনা? এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায়।
কারণ, কোরিয়া একটি ব্যয়বহুল দেশ। এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া। কোরিয়া দুর্নীতিমুক্ত ন্যায় বিচারের দেশ, এখানে অল্প ভুলে আপনাকে প্রচুর জরিমানাসহ দেশে ফিরত পাঠিয়ে দিতে পারে। প্রতি পদে পদেই রয়েছে অনেক অনেক অনিশ্চয়তা।
আর এই অনিশ্চিতভাবে কোরিয়াতে আসা আপনার উচিত কিনা? এই প্রশ্নটির উত্তর আপনার নৈতিকতার উপরেই ছেড়ে দিলাম।
বর্তমানে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশী অবৈধ বসবাসকারী এখন পর্যন্ত কম (আমার জানা মতে)। তাই বাংলাদেশীদের জন্য বর্তমানে কঠোর কোনো আইন তৈরি করা হয়নি কিন্তু কেউ একজন এভাবে আছে বলেই আপনি আসতে চাইতেছেন, ঠিক তেমনি আপনাকে দেখেও আরো অনেকেই আসবে। আপনাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। ঠিক তখনই কঠোর কোনো আইন তৈরি করা হবে। যার ফলে সত্যিকারার্থে যারা কোরিয়া ঘুরতে আসতে চান তাদের আসার পথ অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। সেই সাথে সাথে বাংলাদেশীদের জন্য কোরিয়ার শ্রমবাজার দিন দিন কমে আসবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমি চেষ্টা করেছি খুব সংক্ষিপ্তাকারে মোটামুটি সবগুলো পয়েন্ট আলোচনা করতে। বিস্তারিত করতে গেলে লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে। সবশেষে এটাই বলবো যে, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে ভিসিট ভিসায় এসে কোরিয়াতে থেকে যাওয়া কখনই উচিৎ হবে না।
ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পোস্টে উল্লেখ নেই এমন কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে প্রশ্ন করতে পারেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *