রিলিজ মানে মুক্তি বা অব্যাহতি কিন্তু আমি আজকে আলোচনা করবো দক্ষিণ কোরিয়ায় E9 ভিসাপ্রাপ্ত কোরিয়ার (노동부) শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে মালিক পক্ষের সাথে শ্রমচুক্তি থেকে মুক্ত হওয়ার পন্থা গুলো।
শুরু করার পূর্বেই প্রথমে ৩টি নিয়ম সম্পর্কে জেনে রাখি।
১) কোন মালিক তার কর্মরত কোন শ্রমিককে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রিলিজ দিতে পারে না (তবে শর্ত সাপেক্ষে পারে) এবং কোন শ্রমিক তার মালিকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রিলিজ নিতে পারে না। (তবে শর্ত সাপেক্ষে পারে)।
২) যে ব্যক্তি কোরিয়াতে আসার পর কোম্পানি বদল করে না, সে কমিটেড ওয়ার্কার হিসেবে বিবেচিত হয় এবং কোম্পানি বদল করলে কমিটেড হিসেবে থাকে না।
৩) কোন কোম্পানিতে এক বছর কাজ করলে সে (퇴직금) অবসর ভাতাপ্রাপ্ত হয় এবং এক বছরের কম কাজ করলে অবসর ভাতা কর্তন করে পুনরায় মালিকের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়।
উপরোক্ত ৩টি বিষয় জানার পরে এবার আসি মূল আলোচনায়। আমি আমার ভাষায় সহজভাবে বুঝার জন্য রিলিজকে প্রথমে ৪ ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি।

১) মালিক পক্ষ থেকে রিলিজ।
এই রিলিজের প্রথম শর্ত হল, এখানে শ্রমিকের কোনো দোষ থাকেনা। মালিকের কাজের চাপ কমে গেলে, ব্যবসা মন্দা হলে কিংবা কোন আইনে দন্ডিত হলে, ইত্যাদি কারণে সে স্বেচ্ছায় শ্রমিককে রিলিজ দিতে পারে। তবে এজন্য শাস্তি সরূপ তাকে ৬মাসের মধ্যে নতুন শ্রমিক নিয়োগের ক্ষমতা দেয়া হয় না।
অপরদিকে শ্রমিককে ঠিকঠাক মত বেতন না দিলে, শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হলে, যৌন হয়রানি করলে। শ্রমিক ইচ্ছাকৃতভাবে মালিকের পক্ষ থেকে রিলিজ নিতে পারবে।
এক্ষেত্রে শ্রমিক কমিটেড ওয়ার্কার হিসেবে বিবেচিত হবে কিন্তু ১ বছরের কম হলে অবসর ভাতা কর্তন করা হবে এবং মালিকের দন্ড বহাল থাকবে।

২) শ্রমিকের পক্ষ থেকে রিলিজ
এই রিলিজের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের কোনো দোষ থাকেনা। শ্রমিক যদি স্বেচ্ছায় দেশে প্রত্যাবর্তন করতে চায় অথবা এমন অসুস্থ যা কাজ করতে অক্ষমতা প্রমাণ হয় (ডাক্তারের সার্টিফিকেট থাকতে হবে) তাহলে মালিক রিলিজ দিতে বাধ্য থাকবে।
অপরদিকে শ্রমিক যদি প্রতিদিন দেরী করে কাজে উপস্থিত হয় অথবা বিনা ছুটিতে কাজের দিনে পরপর (৪ দিনের বেশি) অনুপস্থিত থাকে তাহলে মালিক শ্রমিকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রিলিজ দিতে পারবে।
সেক্ষেত্রে শ্রমিক ওয়ার্কার হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং মালিক তার বদলে অন্যজনকে নিয়োগ দিতে পারবে।
৩) মালিক ও শ্রমিকের সমন্বয়ে রিলিজ
ঘটনা যাই ঘটুক, ৯০% ক্ষেত্রে এই ধরনের রিলিজ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক দুইজনেই কিছুটা ছাড় দিয়ে থাকে। একজন মালিক নিজের দোষ বা তার শ্রমিকের দোষ এড়িয়ে যায় অপরদিকে শ্রমিকও নিজের দোষ ও মালিকের দোষ চেপে যায়।
এক্ষেত্রে শ্রমিক ওয়ার্কার হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং মালিক অন্যজনকে নিয়োগ দিতে পারবে।
৪) অটো রিলিজ।
অটো রিলিজ মানেই শ্রমিককে রিলিজ দেওয়ার মতো কর্তৃত্ব না থাকা। অর্থাৎ মালিক না থাকা অথবা কোম্পানি আইনগতভাবে উধাও হয়ে যাওয়া। দেওলিয়ার কারণে, আইনের কারণে, প্রাকিতিক দুর্যোগের কারণে অথবা কে কোন কারনেই হোক কোম্পানি বন্ধ হলে। সেই শ্রমিক অটো রিলিজপ্রাপ্ত হয়।
এক্ষেত্রে শ্রমিক কমিটেড ওয়ার্কার হিসেবে বিবেচিত হবে এবং ১ বছরের কম হলেও তার অবসর ভাতা বহাল থাকবে।
সুতরাং বলা যেতে পারে যে, ১নং ও ৪নং প্রায় একই রকম শুধুমাত্র অবসর ভাতার তারতম্য রয়েছে। এবং ২নং ও ৩নং একই রকম আইন প্রয়োগ হবে।
বিশেষভাবে লক্ষণীয়ঃ
যেহেতু ২ পক্ষের সম্মতিক্রমে রিলিজ সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। তাই মালিকপক্ষ নদুম্বুতে রিলিজ পাঠানোর পর শ্রমিকের হাতে ৩০ দিন পর্যন্ত সময় থাকে। এর মধ্যে মালিক ও শ্রমিকের সমঝোতা হলে রিলিজ ক্যানসেল করে শ্রমিককে আবারও নিয়োগ দিতে পারে। কিন্তু শ্রমিক যদি রিলিজ পেপারে স্বাক্ষর করে তাহলে মালিক ইচ্ছা করলেও সেই কর্মীকে আর নিয়োগ দিতে পারবে না। উক্ত ৩০ দিনের ভিতর রিলিজ পেপার স্বাক্ষর না করিলে শ্রমিক অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
যেদিন শ্রমিক রিলিজ পেপারে স্বাক্ষর করবে সেদিন থেকে তাকে ৯০ দিনের মধ্যে পুনরায় নতুন ভাবে নতুন কোম্পানিতে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। উক্ত ৯০ দিনের ভিতরে কোন কোম্পানিতে চুক্তিবদ্ধ হতে না পারলে সে অবৈধ হয়ে যাবে।