২০২২অক্টবর০৩ কোরিয়ার ৪৩৫৪ তম জন্মদিন অথবা ৪৩৫৪ তম ফাউন্ডেশন ডে (개천절)।
কোরিয়ার প্রাচীন ভাষা হানজা 개천 শব্দের অর্থ হলো আকাশ উন্মুক্ত হওয়া (하늘이 열다), 절 অর্থ হলো দিন। 개천절 এর পুরো অর্থ দাঁড়াচ্ছে আকাশ উন্মুক্ত হওয়ার দিন।
কোরিয়ার ইতিহাসের সবচাইতে প্রাচীন বই 삼국유사 এবং 제왕운기 বইতে এ সম্পর্কে একটি গল্প আছে। আসুন কোরিয়ার ফাউন্ডেশন ডে (개천절) সম্পর্কে রূপকথার গল্প জেনে নেই!!!
অনেক অনেক আগে আকাশ রাজ্যে দেবতারা বসবাস করতেন। আকাশ রাজ্যের রাজা (বাবা) হোয়ানিন(환인)ও ছেলে হোয়াংউং(황웅)। কোরিয়া উপমহাদেশের লোকেরা তখন কৃষিকাজ করে জীবন যাপন করত। তাদের জীবন ধারন ছিল অনেক কষ্টের। ছেলে হোয়াং উং এর আকাশ রাজ্যের চেয়ে পৃথিবীর দিকে আগ্রহ বেশি ছিল। একদিন বাবাকে বলল আমি পৃথিবীতে যেতে চাই সেখানে গিয়ে মানুষকে সাহায্য করতে চাই। পিতা সম্মতি দিলেন আর সাথে মেঘের দেবতা,বৃষ্টির দেবতা ও বাতাসের দেবতাকে দিয়ে দিলেন পৃথিবীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। হোয়াং উং তিন দেবতা এবং কয়েক হাজার সৈন্য বহরকে সঙ্গে নিয়ে পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর জায়গা বর্তমান গাংউয়নদো প্রদেশের থেবেক পাহাড়(태벡산) পদদেশে আসলেন। তিন দেবতার সাহায্য নিয়ে মানুষকে কৃষি পণ্য উৎপাদন শিখাতে শুরু করলেন আর মানুষের একে অপরের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে শুরু করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই মানুষেরা সুখে-শান্তিতে বসবাস শুরু করলো।
এসব দেখে একদা এক ভাল্লুক(곰) ও এক বাঘ(호랑이) হোয়াং উংকে এসে বললেন আমরাও মানুষ হতে চাই আমাদেরকে মানুষ বানিয়ে দিন। হোউয়াং উং তাদেরকে এক মুঠো ঝাল লতা(쑥 한줌) (সুক)ও ২০টি রসুন( 마눌 20쪽) দিলেন আর বললেন ১০০ দিন সূর্যের আলোয় শরীরে লাগবে দেওয়া যাবে না। শুধুমাত্র এই রসুন ও সুক খেয়ে জীবন যাপন করতে পারলে মানুষ হয়ে যাবি। তাঁর কথামতো ভাল্লুক ও বাঘ অন্ধকার গুহায় এসে মানুষ হবার প্রত্যাশায় শুধু রসুন ও সুক খেয়ে দিন পার করতে লাগল। ২১ দিন যাওয়ার পর বাঘ ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে “বলল আমি মাংস খেতে চাই।” মানুষ হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে গুহা থেকে বেড়িয়ে আসল। ওদিকে ভাল্লুক ঐ খাবার খেয়েই ১০০ দিন পার করল । ১০০দিনের মাথায় ঈশ্বর পুত্রর ওয়াদা অনুযায়ী ভাল্লুক থেকে সুন্দরী মহিলা মানুষে রুপান্তরিত হলেন আর হোয়াং উং এর কাছে এসে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন। হোয়াং উং তার নাম দিলেন উংনিয়ো(웅녀)পরবর্তীতে উংনিও ঈশ্বর পুত্র হোয়াং উং কে আর একটি অনুরোধ করেন; ” আমাকে একটি পুত্র সন্তান দান করুন” এই ভাল্লুক থেকে মানুষে রুপান্তরিত উং নিয়োকে হোয়াং উং কে বিবাহ করলেন। কিছুদিন পর তাদের কোল জুড়ে আসল পুত্র সন্তান “থাংগুন” (단군) । এই থাংগুনই খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩৩ শতাব্দীর দশম মাসের ৩ তারিখ জোসন (কোরিয়ার পূর্ববর্তী নাম) রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেন। এটাই কোরিয়া নামক দেশ সৃষ্টির ইতিহাস।
পরবর্তীতে খ্রিস্টাব্দ বারোশো শতাব্দীতে জোসন রাজপরিবারের উত্থান হয়। তাই থাংগূন ওয়াং প্রতিষ্ঠা করা জোসন রাজ্যকে খোজোসন বা পূর্ব জোসন বলে পরিচিতি লাভ করে।
প্রতিবছর কোরিয়ানরা এই দিনটিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
এটা নিছকই একটা রুপকথার গল্প। কিন্তু অধিকাংশ কোরিয়ানরাই বিশ্বাস করে এটি।