দক্ষিণ কোরিয়ার 현충일 (জাতীয় মেমোরিয়াল দিবস) !
গণপ্রজাতন্ত্রী দক্ষিণ কোরিয়া নামক দেশটির জন্য আত্মনিবেদনকারী শহীদদের স্মরণে প্রজাতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন এই জাতীয় মেমোরিয়াল দিবস (현충일) । প্রতিবছর জুন মাসের ৬ তারিখে এই দিবসটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় উদযাপন করা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার ছুটির দিন আইন অনুযায়ী এটি সরকারি ছুটির দিন হলেও মূলত একটি ছুটির দিন নয়। এটি জাতীয় মেমোরিয়াল দিবস (기념일 শোক দিবস)। সকালবেলায় পতাকা উত্তোলন করার পরে সেটি আবার এক পতাকা দূরত্ব নিচে নামিয়ে উত্তোলন করতে হয় যাকে আমরা অর্ধ নির্মিত পতাকা(조기) বলে থাকি। সকাল ১০ থেকে ১০টা১মিনিট দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় কবরস্থান(현충원) থেকে সারাদেশে একযোগে ১ মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। এই সময় এক মিনিট সাইরেন বাজানো হয় এবং এর সঙ্গে সঙ্গে কামান ফোটানো হয়। দেশের জন্য শহীদ সকল বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানায় সারা দেশের মানুষ। তারপর জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
তাৎপর্য:
আজকের এই দিনটি চিন্তা করা যায়! সময়ের স্রোতে ব্যস্ততার মাঝে আমরা দক্ষিণ কোরিয়াতে এসে স্বাধীনভাবে চাকরি করে যাচ্ছি। দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক এবং অন্যান্য দেশের বিদেশি যারা রয়েছে সকলে স্বাধীনভাবে দেশের মাঝে চলাফেরা করছে, কাজ করছে, চাকরি চালিয়ে যাচ্ছে। নিয়মতান্ত্রিক সুখী জীবন। স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশটি বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু এই দেশটির আজকের এই অবস্থানের জন্য অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। তাদের জীবনের বিনিময়ে দক্ষিণ কোরিয়া আজ এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসটি ছিল রোমাঞ্চকর সাগরের ঢেউয়ের মতো। কখনো ঊর্ধ্বমুখী কখনো নিম্নমুখী। অনেক যুদ্ধ হয়েছে, অনেকবার দেশ বড় হয়েছে, ছোট হয়েছে ,ভাগ হয়েছে, আবার একত্রিত হয়েছে। সর্বশেষ যে স্মৃতিটি বেশি মনে করিয়ে দেয় দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষকে সেটি হচ্ছে ১৯১০ সাল। জাপানের কাছে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের স্বাধীনতা হারায়। ৩৫বছর দেশটিতে শাসন চালায় জাপান। এর মাঝে অনেকবার আন্দোলন হয়েছে অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। প্রথম আন্দোলন হয়েছিল ১৯১৯ সালের মার্চ মাসের ১ তারিখে। সে দিনটির স্মরণে আজও দক্ষিণ কোরিয়াতে স্মৃতি দিন (3월 1일 삼일절)হিসেবে স্মরণ করা হয়। এছাড়াও ১৯৩১,১৯৩৮, ১৯৩৯, ১৯৪০, ১৯৪১, ১৯৪২ এবং ১৯৪৩সালের আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। জাপানিজদের শাসনকালে অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে দিতে হয়েছে অনেক মহিলার সম্ভ্রম। জাপানিজ অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানো শহীদদেরকে আজও স্মরণ করা হয়। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পরে দুই কোরিয়ার মাঝে সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। ১৯৫০ সালের ২৫ জুন এদের যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৯৫৩সালে শেষ হয়। তিন বছর এক মাস দুই দিন যুদ্ধকালীন সময়ে কোরিয়ার ৩৭৩৫৯৯মানুষ শহীদ হয় এবং আহত হয় প্রায় ২লক্ষ ৩০হাজার মানুষ। অনেকে এখনো নিখোঁজ। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ার স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর অনেকেই জীবন দিয়েছে।
আজ দেশের মানুষ নীরবে শান্তিতে ঘুমাতে পারে, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। আর এ স্বাধীনতা অব্যাহত রাখার জন্য এখনো অনেক মানুষকে জীবন দিতে হয়। জাতীয় পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী, দমকল বাহিনী, অন্যান্য বাহিনী যারা রয়েছে। প্রতিবছরই দেশ তথা দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য কেউ কাউকে না কাউকে জীবন দিতে হয়। যারা দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হয় তাদের স্মরণে মূলত এই দিনটি উদযাপন করা হয়। কোরিয়ার ইতিহাস অনুযায়ী বেশিরভাগ আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে জুন মাসে। এই সময় আবহাওয়াটা ভালো থাকে, মানুষ সুখে জীবন যাপন করে। তাই এই সময়টায় যারা জীবন দিয়ে তাদেরকে ভালো রেখেছে তাদেরকে স্মরণ করার জন্য একটি দিন নির্ধারণ করা হয়। ১৯৫৬সাল থেকে জুন মাসের ৬ তারিখ দিনটি নির্ধারণ করা হয়েছে।