설날 (সল্লাল- কোরিয়ান নতুন বছর) ইতিবৃত্ত

Spread the love

কোরিয়ান নববর্ষ 설날(সল্লাল) হল কোরিয়ার নববর্ষ বা কোরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন। কোরিয়ান ভাষার জাতীয় ইনস্টিটিউট অনুসারে কোরিয়ার নববর্ষের দিনটি চন্দ্র মাসের বা চন্দ্র নববর্ষের প্রথম দিন। নববর্ষের দিন তার আগের দিন এবং পরের দিন সহ ৩ দিনের ছুটি থাকে এ সময়। সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার আর রবিবার সঙ্গে থাকার ফলে এই ছুটিটা অনেক সময় এক সপ্তাহ হয়ে যায়। কোরিয়ানরা উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসবটি পালনের জন্য তাদের গ্রামের বাড়িতে ছুটে যায়। কোরিয়া ছাড়াও অন্য দেশের মানুষেরা একে লুনার নববর্ষ, চীনা নববর্ষ, কোরিয়ান নববর্ষ হিসেবে অভিহিত করে থাকে। কোরিয়া ছাড়াও আরো কয়েকটি দেশে এই নববর্ষ উদযাপিত হয়। চলুন কোরিয়ান নববর্ষ সল্লাল সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জেনে নেই।

কোরিয়ানদের কাছে সল্লালঃ
সল্লাল শব্দের অর্থ নতুন বছরের প্রথম দিন। তবে কোরিয়ান ভাষায় সল্লাল বলতে চন্দ্র নববর্ষ বা সোলার নিউইয়ার বোঝানো হয়। এটা কোরিয়াতে জাতীয় ছুটির দিন। ২০১৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত সাধারণ ছুটি একদিন ছিল এবং আগে-পরে সহ মোট তিন দিন ছুটি থাকতো। পরবর্তীতে সরকারিভাবে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার এবং রবিবার সহকারে প্রায় পাঁচ দিনের ছুটি প্রতিবছরই কাটানোর সুযোগ পায় কোরিয়ানরা। অনেকে আবার বাৎসরিক ছুটি এর সঙ্গে যোগ করে পুরো এক সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে থাকে। সাধারণত মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের প্রায় তিন ভাগ কোরিয়ান তাদের গ্রামের বাড়িতে ছুটে যায় পরিবারের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর জন্য। এর ফলে রাস্তাগুলোতে লম্বা আকারের ট্রাফিক জ্যামের দেখা মেলে । বাস রেল বিমান কোন কিছুরই টিকিট অগ্রিম বুকিং না করলে টিকিট পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায় । অনেকে আবার এই ছুটিতে পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে ভ্রমণে যায়। তবে এই বৎসর করোনার জন্য এই সুযোগগুলো অনেকাংশে কমে গেছে। কোরিয়ানরা সল্লাল এ একে অপরের সাথে উপহার আদান প্রদান করে থাকে। কোম্পানি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মচারীদেরকে বিভিন্ন রকমের উপহার দিয়ে থাকে।

উৎপত্তি:
গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটি কবে থেকে উৎপত্তি হয়েছে কখন থেকে পালন হয়ে আসছে এই ধরনের কোনো সঠিক ব্যাখ্যা কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে থ্রি কিংডম রেকর্ডস বুক অফ ওয়েই, চাইনিজ হিস্টোরিক্যাল বুক। অনুসারে ধারণা করা হয় থ্রি কিংডমস শাসন ব্যবস্থাকে কোরিয়ান ভাষায় বলা হয় 삼국시대 বা 신라 삼국통일시대 এ সময় এটি প্রথম চালু হয়। ধারণা করা হয় ৬০০ শতাব্দী থেকে সল্লাল পালন করা হয়ে থাকে ।

উপহার:
সল্লাল এ একে অপরকে বিভিন্ন ধরনের উপহার দিয়ে থাকে। সাধারণত এ সময় কোরিয়ার দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের উপহার এর সাজানো বাক্স পাওয়া যায়। বিভিন্ন ফল, পিঠা জাতীয় খাবার, সাবান, শ্যাম্পূসহ অন্যান্য কসমেটিক্স এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস সুন্দর বাক্সে মোড়ানো থাকে। সাধারণত কোরিয়ার কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদেরকে বিভিন্ন রকম গিফট বক্স উপহার দেয় এবং সঙ্গে বোনাস ও দিয়ে থাকে।

পোশাক:
কোরিয়ানরা সাধারণত নববর্ষ উদযাপনের সময় তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হানবোক পরিধান করে। এই ঐতিহ্যবাহী পোশাকটি সাধারণত উজ্জ্বল লাল, গোলাপি বা কমলা রঙের হয়। তবে অনেক আধুনিক কোরিয়ান আধুনিক নতুন পোশাক পরেও এই উৎসবটি উদযাপন করে থাকে।

খাবার:
সল্লালের বিখ্যাত খাবার হচ্ছে তকগুক। তক শব্দের অর্থ হচ্ছে পিঠা আর গুক শব্দের অর্থ হচ্ছে ঝোল। সাধারণত ময়দার রোল এর মতো করে তৈরি করা রোল আর কেক কেটে চিকন চিকন করে সেটা দিয়ে এক ধরনের ঝোল তৈরি করা হয়। তারা বিশ্বাস করে সাদা ময়দার তৈরি এই তক খেলে রোগ বালাই মুক্ত হয়, অনেকদিন সুন্দর জীবন যাপন করা যাবে।এছাড়াও অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পুলি এবং খাবারের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও আরও কয়েকটি বিখ্যাত খাবার রয়েছে: সানজক, তকখালবী, সীকহৈ এবং বিভিন্ন প্রকার মাংস।

খেলাধুলা অনুষ্ঠান:
কোরিয়ার চন্দ্র নববর্ষের দিনে বিভিন্ন ধরনের খেলা বা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে সবচাইতে বিখ্যাত খেলা হচ্ছে “ইউতনোরি”(윷놀이)। ছোট লাঠি দিয়ে সহজ নিয়মে খেলা যায় এটি। পরিবারের সদস্যরা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে এই খেলাতে অংশগ্রহণ করেন।এই খেলার মাধ্যমে পারিবারিক সম্পর্ক মজবুত হয় বলে কোরিয়ানরা বিশ্বাস করে থাকে। জেগি ছাগি(제기차기) নামক এক ধরনের খেলা রয়েছে ছোট্ট বলের মত পা দিয়ে খেলতে হয়। 연날리기 বা ঘুড়ি উড়ানো, এছাড়াও পরিবারের সবাই একসঙ্গে মজার মজার গল্পের মধ্যদিয়ে একসঙ্গে ঘুড়ি উড়িয়ে উৎসবটি উদযাপন করে। অবশ্যই পালনীয়: সল্লালের দিন সকালবেলা নতুন পোশাক পরে বাড়ির মুরব্বীদের কে সেজদা করার মত করে সালাম করতে হয়। তখন মুরব্বিরা তাদের সন্তান বা নাতিনাতনীর জন্য দোয়া করে দেন যেন তারা ভালো থাকে। ‌সাধারণত বাচ্চাদের হাতে এইসময় নতুন টাকা বা সালামি দেওয়া হয়। সল্লালের আগেরদিন পূর্বপুরুষদের কবর পরিষ্কার করা এবং সল্লাল এর দিনে তাদের জন্য প্রার্থনা করার মত ঐতিহ্য কোরিয়ায় প্রচলিত রয়েছে।

কোরিয়ার বাইরে সল্লালঃ
দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়াও আরো কয়েকটি দেশে এই চন্দ্র নববর্ষ পালন করা হয়। যে দেশগুলোতে পালন করা হয় সেগুলো হচ্ছে: উত্তর কোরিয়া, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, মঙ্গোলিয়া, হংকং, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া।

খুদে শুভেচ্ছা বার্তা:

신축년의 해가 밝았습니다.
새해에는 소망하는 모든 이루어지는 뜻깊은 해가 되기를 기원합니다.
새해 많이 받으세요!
সহকর্মীদের নিকট এই মেসেজটি লিখে পাঠাতে পারেন। যার অর্থ হচ্ছে: নতুন বছর সূচনা হয়েছে। এ বছর সবার জন্য অর্থবহ হবে বলে আশা করছি, যেখানে সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হবে।শুভ নববর্ষ !!


Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *