ইপিএস ভিসায় কোরিয়া যাবার আগে যা জানা প্রয়োজন

Spread the love

যে সমস্ত মালিকগণ আপনাকে E-9 ভিসা দিয়ে কোরিয়াতে নিয়ে আসেন!!!
বোয়েসেল থেকে যখন কনফার্মেশন আসে, আপনার ভিসা ইস্যু হয়েছে। আপনি তখন মাটি থেকে তিন হাত লাফিয়ে খুশি প্রকাশ করেন। ভিতরে থাকা সুপ্ত বাসনাগুলো আবার জেগে উঠে। মনের গহীনে বুনতে থাকেন নিত্যনতুন স্বপ্ন। অথচ অপরদিকে ভাগ্য আপনার জন্য কি প্রস্তুত করে রেখেছে তা আপনি কল্পনাও করছেন না। এই বিষয় নিয়ে আজকে একটু আলোচনা করবো।
প্রথম কথাঃ কোরিয়াতে বেকারত্বের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে তা প্রকট আকারও ধারণ করেছে। তদুপরি বিদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
কেন? কারণ একটাই, কোরিয়ানরা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাচ্ছে না কিংবা করছে না। সেজন্যই এই ম্যানুয়ালি কাজ বা দৈহিক পরিশ্রমের কাজগুলো সমাধা করার জন্যই দরকার বিদেশী অদক্ষ শ্রমিকদের।
(উল্লেখ্য যে, বর্তমানে সরকার এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে যাতে বিদেশী শ্রমিকদের বদলে নিজেদের জনবলকে কাজে লাগানো যায়। যেমনঃ বেতন বাড়ানো, কাজের সময় কমানো, কম্পানিকে ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা সহ আরো অনেক কিছু)।
দ্বিতীয় কথাঃ কোরিয়াতে বর্তমানে যে সমস্ত বিদেশী শ্রমিকগণ রয়েছেন তাদের মধ্যে বিশাল এক অংশ বেকার রয়েছে অর্থাৎ রিলিজে আছে। তাদেরকে যে কোম্পানি নিয়ে এসেছিল তারা সেই কোম্পানি থেকে রিলিজ নিয়ে অন্য কোম্পানীতে চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের (노동부) নিয়ম অনুযায়ী, একজন শ্রমিক নির্বাচিত কোম্পানি থেকে রিলিজ নেওয়ার পরে তাকে labour office (고용 센터) যোগাযোগ করতে হয়। (যেখানে পূর্ব থেকেই মালিকগনের শ্রমিকদের জন্য রিকুইজেশন থাকে।) সেই labour office থেকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী তাদেরকে (일자리) ইলচারী (কাজের সন্ধান) এর মেসেজ দেওয়া হয়। শ্রমিকগণ সেই মেসেজের ভিত্তিতে কোম্পানি ভিজিট করতে যায়। পছন্দ হলে যোগদান করে আর পছন্দ না হলে আবার labour office যোগাযোগ করে। এইভাবে চলতে থাকে যতদিন না সে কোথাও যোগদান করতে সক্ষম হচ্ছে।
(উল্লেখ্য যে, রিলিজের পর ৯০ দিনের মধ্যে তাকে যে কোন একটা কোম্পানিতে যোগদান করতে হবে নতুবা সে অবৈধ বলে বিবেচিত হবে)।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যেঃ
১) কোরিয়াতে বেকারত্বের সমস্যা আছে আবার কাজের শ্রমিকদের ও চাহিদা রয়েছে।
২) বিদেশ থেকে সদ্য আগত শ্রমিকদের নিজস্ব ধারণা থাকে না কিন্তু এখানে বসবাসরত শ্রমিকদের চাকুরীতে যোগদানের ক্ষেত্রে নিজস্ব অধিকার ও ধারণা থাকে ।
এইবার আসি আসল কথায়ঃ
লক্ষ্য করুন, যে সমস্ত কম্পানিতে শ্রমিকগণ ভিজিট করার পরেও যোগদান করেনি। কারন,
১) বেতন কম।
২) কাজে পরিশ্রম বেশি।
৩) সুযোগ-সুবিধা কম।
৪) খাওয়ার সমস্যা।
৫) বাসস্থানের সমস্যা।
৬) মালিকের আচরন বা ভাষার সমস্যা।
৭) দিনের কাজ, রাতের কাজ ইত্যাদি ইত্যাদি।
তখন এই সমস্ত মালিকগণ বাধ্য হয়ে শ্রম মন্ত্রনালয় (노동부) এর কাছে অনুরোধ করে যাতে তারা বিদেশ থেকে শ্রমিক এনে মালিককে দেওয়া হয়। ঠিক এই অনুরোধের কারণেই আপনাকে কোরিয়াতে E-9 ভিসা দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
সহজভাবে যদি বলিঃ আপনাকে যে মালিকগণ নিয়ে এসেছে তাদের মধ্যে ৯০% ভাগ মালিকের কোনো না কোনো সমস্যা আছে বলেই আজকে আপনি কোরিয়াতে আসতে পেরেছেন। যদি সমস্যা না থাকত তাহলে এখান থেকেই তারা শ্রমিক পেয়ে যেত।
উপসংহার: এবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা আপনাদের। আপনার পাশের কোম্পানির শ্রমিকটি কম কাজ করেও অনেক বেশি বেতন পাবে সেখানে আপনি বেশি কাজ করেও কম বেতন পাবেন। একই কোম্পানিতে সিনিয়র ভায়েরা হালকা কাজ করলেও আপনাকে ভারী কাজগুলো করতে হবে। প্রথম অবস্থায় থাকা, খাওয়া ও ভাষার জন্য আপনাকে শারীরিক ও মানুষিকভাবে সমস্যাই পরতে হবে। এমন আরও অনেক সমস্যা আপনার সামনে উপস্থিত হবে।
আপনি কি প্রস্তুতি নিয়ে আসতেছেন? এমন বিপদ মোকাবেলা করার জন্য। যদি আপনার উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়। Welcome to South Korea.
পরিশেষে একটা ভালো কথা বলে শেষ করি।
এখনও কোরিয়ার অনেক মালিকগণ ধারণা করে যে, “বাংলাদেশের লোকেরা অনেক ভালো কাজ করতে পারে এবং কোরিয়ান ভাষা ভাল বুঝে”।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *